৫’শ ভোটারের কাছে যেতে হাজার কি.মি. পাড়ি
অস্ট্রেলিয়া নির্বাচন: প্রত্যন্ত, দুর্গম ও চ্যালেঞ্জিং স্থানে যেভাবে ভোট হয়
অস্ট্রেলিয়ার মতো বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে থাকা জনবসতির একটি দেশে যেখানে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক- সেখানে সবার জন্যে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের জন্যে বেশ চ্যালেঞ্জের।
আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ৯৬.৮% ভোটারের প্রত্যেকের জন্যে ব্যালট নিশ্চিত করাটা আরো দূরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানই শহর বা আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে ভোট দিয়ে থাকেন, তবে এমন অনেক ভোটারই আছেন যারা সহজেই সেই স্থানগুলোতে যেতে পারবেন না। আর তাই সবার জন্যে সুযোগটি দিতে দেশটির নির্বাচন কর্মকর্তারা ১২ দিনের বেশি সময় ধরে ৩ হাজার প্রত্যন্ত বা দূরবর্তী স্থান পরিদর্শন করেছেন।
কোনো স্থানে কেবলমাত্র একটি ব্যালট বাক্স পৌঁছে দিতে তাদের সড়ক, আকাশ পথসহ সমুদ্রও পাড়ি দিতে হয়েছে।
এমন ৪টি প্রত্যন্ত, দুর্গম ও চ্যালেঞ্জিং স্থানের উল্লেখ করা হলো:
১. দুর্গম আদিবাসী সম্প্রদায়দের আবাসভূমি
নির্বাচন কর্মকর্তা জিওফ ব্লুম বলেন, “আমরা যদি একটি মাত্র অনুরোধ পেয়েছি, তবে তা রক্ষার জন্যে সেখানে পৌঁছে গেছি।”
তার দল দেশটির উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০টি প্রত্যন্ত স্থানে যান, যেখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। আর এজন্যে তারা ভাড়া করেন নৌযান, উড়োজাহাজ, দুর্গম পথে যাবার উপযোগী গাড়ি থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার পর্যন্ত।
আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দুই থেকে আড়াই হাজার বসতির বড় আবাসভূমি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে চার থেকে পাঁচটি বাড়ি নিয়ে একটি অঞ্চল- যেখানে ভোটার মাত্র দশজন।
তবে এখনো কর্মকর্তারা পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন এবং হেলিকপ্টারে দিনে অন্তত তিনটি সম্প্রদায়ের আবাসভূমিতে যাবেন এমনই তাদের পরিকল্পনা।
মি. ব্লুম বলেন, “আমরা যখন সেসব স্থানে গিয়েছি, তখন অধিবাসীদের অনেকেই হয়তো গিয়েছিলেন শিকারে বা মাছ ধরতে।”
তবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদাসীনতার চেয়ে ধৈর্য ধরে তাদের জন্যে বসে থাকার অভিজ্ঞতাই বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।
১৯৬২ সালের আগে পর্যন্ত আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের ভোটাধিকার ছিল না।
দেশটির নির্বাচন কমিশন (এইসি) ১৯৮৪ সাল থেকে দূরবর্তী আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর কাছে মোবাইল ভোটিং টিম পাঠানো শুরু করেছে।
যেমন ধরা যাক – আর্নহেম ল্যান্ডের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে ডাক সেবার ওপর নির্ভর করা যায় না ভোট দেবার ক্ষেত্রে। তাই এইসি-র পাঠানো দল সেখানে যেতে যথেষ্ট কষ্টই করে থাকে।
মি. ব্লুম বলেন, “সম্প্রতি আমাদের একটি দল ছোট একটি সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছুতে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের দুর্গম রাস্তা অতিক্রম করেছিল।”‘
২. অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন … এন্টার্কটিকায়?
ব্যাপারটি সত্যি, ২০১৯ সালের অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে এন্টার্কটিকায় ৪৯জন অভিযাত্রী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন অভিযানকারী, ব্যবসায়ী এবং বিজ্ঞানী।
প্রতিবছর প্রায় ৫০০ জনের মতো অস্ট্রেলিয়ান দক্ষিণে এন্টার্কটিকায় যান। আইসব্রেকার জাহাজ বা বরফের ওপর নামতে সক্ষম বিমানে বছরের অক্টোবর থেকে মার্চে সেখানে যাওয়া সম্ভব। বাকি সময়ে সে সংখ্যা হ্রাস পায়। বর্তমানে ৭৪ জন অস্ট্রেলিয়ান মেরু অঞ্চলে রয়েছেন যারা ১২-১৪ মাস সময় সেখানে থাকবেন।
অস্ট্রেলিয়ার আইনে স্বীকৃত এন্টার্কটিকার এমন জায়গাগুলোতে এরই মধ্যে ব্যালট বাক্স পৌঁছে গেছে। প্রতিটি ভোট স্টেশনে একজন অভিযানকারীকে এন্টার্কটিক রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগও করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার এন্টার্কটিক বিভাগের মার্ক হর্স্টম্যান বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, এন্টার্কটিকা থেকে ব্যালট বাক্সগুলো অস্ট্রেলিয়ার পাঠানোর কোনো উপায় নেই। সেখানে ভোট নেওয়া হয় সম্পূর্ণ কাগজের ভিত্তিতে। আর ভোট গ্রহণ শেষ হলে রিটার্নিং অফিসার ব্যালট পেপার দেখে টেলিফোনে তার ফলাফল জানান।
৩. দূরের দ্বীপগুলোতে ব্যালট পৌঁছানো
উত্তরের উপকূলে ২৭৪টি টোরেস স্ট্রেট আইল্যান্ড রয়েছে, যার মধ্যে ১৭টি মানুষের বাস। এই দ্বীপগুলিতে মূলত আদিবাসীরা থাকেন।
এ বছর এইসব দ্বীপগুলো থেকে ৪,২৩১ জন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। ২০১৬-তে যার সংখ্যা ছিল ১৬।
আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপগুলো কুইন্সল্যান্ডের অংশ, যার জন্যে এইসি-র কর্মকর্তারা সেখানে বহুবার পরিদর্শনে গিয়েছেন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের একজন ডেভিড স্টুয়ার্ট জানান যে, অনেকগুলোতে যেতে তাদের নৌকা ও হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হয়।
তার বর্ণনায়, দ্বীপগুলো ওপর থেকে ছবির মতো সুন্দর মনে হলেও বাস্তবে সেখানকার তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি। কোথাও জোয়ারের পানি অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এজন্যে নির্বাচনে ব্যবহার্য সবকিছুই পানি নিরোধক বলে জানান তিনি।
৪. কৃষক, খনি শ্রমিক
কেবলমাত্র আদিবাসী ভোটাররাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন না, অস্ট্রেলিয়ায় দূরবর্তী কৃষিক্ষেত্র এবং খনিতেও দেশটির নির্বাচন কমিশন প্রতিনিধিদের পাঠান। যেমন বলা যায় লিনস্টারের খনিগুলো, প্রত্যন্ত সেই খনি পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা ৫০০ জন। পার্থ থেকে যার দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার।
মি. ব্লুম জানান, “তাদের অবশ্য পোস্টাল ভোটেই আগ্রহ বেশি। আর তাই তাদের কাছে মোবাইল পোলিং টিম সেখানে পাঠাচ্ছি না।”
অবশ্য তারা নির্বাচনের দিনের উত্তেজনার অভাব হয়তো অনুভব করবেন, মনে করছেন এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
সূত্র বিবিসি বাংলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন