‘সারেগামাপা’ চ্যাম্পিয়ন অঙ্কিতার আদি বাড়ি কলারোয়ার মাদ্রা গ্রামে…
ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’ চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙা গ্রামের মেয়ে অঙ্কিতা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন তাদের আদি বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার মাদ্রা গ্রামে।
অঙ্কিতা জানিয়েছেন- ‘আমার আদি বাড়ি কিন্তু বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার মাদ্রা গ্রামে। বাবার কাছে শুনেছি, তাঁর জন্মের আগে সবাই ভারতে চলে আসে।’
বাংলাদেশের প্রথম সারির শীর্ষ পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। ১আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার বিনোদন আলাপনে প্রকাশিত সাক্ষাতকারে এমন তথ্য জানিয়েছেন অঙ্কিতা নিজেই। সাক্ষাতকারটি নেন মনজুর কাদের।
প্রথম আলোর সৌজন্যে সাক্ষাতকার প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:
ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙা গ্রামের মেয়ে অঙ্কিতা। এখন পড়াশোনায় মনোযোগী, গান নিয়েও আছে পরিকল্পনা। বুধবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা হয় টেলিফোনে। তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন।
অভিনন্দন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল?
ধন্যবাদ। এটা কীভাবে যে বলি, বুঝতে পারছি না। আমার তো বরাবরই ইচ্ছে প্লে-ব্যাক করার। সারেগামাপাতে আমার নাম যখন ঘোষণা করা হয়, মনে হচ্ছিল, প্লে-ব্যাকের যাত্রায় আরও কয়েকটা ধাপ এগিয়ে গেলাম।
বিজয়ী অঙ্কিতা ও প্রথম দিনের মঞ্চের অঙ্কিতার পার্থক্য কোথায়?
১১ মাসের জার্নিতে অনেক কিছু শিখেছি। বিচারক ও প্রতিযোগী বন্ধুদের কাছে প্রতিনিয়ত শিখেছি। প্রথম দিনে গাওয়া আর ফাইনালে গাওয়ায় পার্থক্য অনেক।
গান শুরুর গল্প শুনতে চাই।
মা নাচ অনেক পছন্দ করতেন, তাই জীবনের শুরু নাচ দিয়ে। তিনটি বছর ভরতনাট্যম ও কত্থকের তালিম নিয়েছি। মায়ের সঙ্গে গাইতামও। বাবা শুনে একদিন মাকে বললেন, ওকে গানে ভর্তি করিয়ে দিই, ওর গলায় তো সুর আছে। বাবার ইচ্ছে ছিল, মাকে টেলিভিশনে গাইতে দেখবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আমি যখন গাওয়া শুরু করলাম, মা–বাবা দুজনেরই ইচ্ছা জাগল, মেয়েকে চলচ্চিত্রের গানে শিল্পী হিসেবে দেখবেন। গানের তালিমের শুরুটা মায়ের কাছে। এরপর রাধাপদ পাল ও রাঠজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে শিখেছি।
ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
প্লে-ব্যাকের প্রতিষ্ঠিত গায়িকা হতে চাই। জানি না কতটা এগোতে পারব, হয়তো বড় প্ল্যাটফর্ম পাব না, তবু চেষ্টা চালিয়ে যাব।
বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম কাকে ফোন করেছিলেন?
আমার ঠাম্মাকে (দাদি)। এরপর দাদু–দিদা (নানা–নানি) ও মামা-মামিকে ফোন করেছিলাম।
পড়াশোনার খবর?
গোবরডাঙা ইছাপুর হাইস্কুল থেকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেব। সামনে টেস্ট পরীক্ষা। পড়াশোনা নিয়ে একটু ভয়ে আছি।
পরিবারের খবর?
মা–বাবা আর ছোট ভাই নিয়ে আমাদের পরিবার।
এর মধ্যে নাকি বাংলাদেশেও এসেছিলেন?
গ্র্যান্ড ফিনালের শুটিংয়ের পর বাংলাদেশের ফরিদপুরে স্টেজ শো করতে গিয়েছিলাম। অনেক ভালোবাসা ও আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে বারবার যেতে চাই, ভালোবাসায় ফিরতে চাই। আমার আদি বাড়ি কিন্তু বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার মাদ্রা গ্রামে। বাবার কাছে শুনেছি, তাঁর জন্মের আগে সবাই ভারতে চলে আসে।
অঙ্কিতার চোখ এখন বলিউডে
‘আমি প্লেব্যাক সিঙ্গার হতে চাই। বলিউডের ছবিতে গান করব।’ বললেন অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। ভারতের জি বাংলা আয়োজিত ‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতায় এবার তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ রুপির চেক, সোনার গয়না ও নতুন গাড়ি। সব মিলিয়ে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মা-বাবার সঙ্গে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সবাই চিনতে পেরেছেন। বলেছেন, “ওই দেখো, অঙ্কিতা যাচ্ছে! জি বাংলার সারেগামাপার চাম্পিয়ন।” খুব ভালো লেগেছে। এটাই তো চেয়েছিলাম।’ গত রোববার জি বাংলায় এই রিয়েলিটি শোর গ্র্যান্ড ফিনালে প্রচারিত হয়েছে। এরপর ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন বাংলাদেশের মাঈনুল আহসান নোবেল। প্রায় শুরু থেকেই বিচারক আর দর্শকদের তাঁর ব্যাপারে ছিল দারুণ আগ্রহ। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নোবেল নাকি আলাদা গুরুত্ব পেয়েছেন। অঙ্কিতা ভট্টাচার্য বললেন, ‘এসব নিয়ে একেবারেই ভাবিনি। এসব ভাবলে গান করব কখন? নোবেল নোবেলের মতো ছিল, আমি আমার মতো। আর দিন শেষে আমরা কিন্তু সবাই ভালো বন্ধু।’
পড়াশোনা নিয়ে অঙ্কিতা ভট্টাচার্য বললেন, ‘গোবরডাঙার ইছাপুর হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। আর্টস নিয়ে। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। অনেক দিন প্রতিযোগিতা আর গান নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে, পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলাম। এখন পড়াশোনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। পড়াশোনাটা অবশ্যই চালিয়ে যাব।’
প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর ইছাপুর হাইস্কুলে যান অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। বললেন, ‘স্কুলে পা রাখতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে পুরো স্কুল। টিচাররা খুব আদর করেছেন। বন্ধুরা এসে জড়িয়ে ধরেছে। স্কুলের সবাই কিছু না কিছু উপহার দিয়েছে। কেউ কিনে এনেছে, কেউ বাড়ি থেকে তৈরি করে এনেছে।’
জানালেন, ‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মিউজিক অ্যালবাম আর চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার প্রস্তাব আসছে তাঁর কাছে। শো করার অনেকগুলো প্রস্তাব জমা হয়েছে। তবে সবকিছু পর তাঁর একমাত্র স্বপ্ন ‘প্লেব্যাক সিঙ্গার’ হওয়া। আরও বললেন, ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন মিউজিকও শিখব, যাতে সব ধরনের গান গাইতে পারি।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার শহর গোবরডাঙায় থাকেন অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। বাড়ি ফিরে বইখাতা নিয়ে বসে পড়েছেন অঙ্কিতা। হাতে একদম সময় নেই। আগামী বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। ইছাপুর হাইস্কুলের শিক্ষকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘সবাই আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছেন। গানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলেছেন। স্কুলের উপস্থিতি নিয়ে ভাবতে নিষেধ করেছেন। পরীক্ষার দিন থাকতে পারিনি, কিন্তু পরে আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’
গান শেখার ব্যাপারে বললেন, ‘আমি কিন্তু শুরু করেছি নাচ দিয়ে। মা চেয়েছিলেন নাচ শিখব। পাঁচ বছর বয়সে যখন গান গাইতে শুরু করি, তখন বাবা গান শিখতে বললেন। বাবা খুব ভালো গান বোঝেন। সেই থেকে শুরু। মা সব ধরনের গান করেন। মায়ের কাছেই আমার গানে হাতেখড়ি। তারপর রাধামাধব পালের কাছে শিখেছি। সাত বছর ধরে শিখছি রথীজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে।’ মায়ের ইচ্ছাতেই ‘সারেগামাপা’ রিয়েলিটি শোতে অংশ নেন। মা-বাবার খুব ইচ্ছা ছিল, তাঁদের মেয়ে এই মঞ্চে গান করবে। অডিশনের পরের অভিজ্ঞতা অঙ্কিতা ভট্টাচার্য বললেন এভাবে, ‘অডিশনের পর যখন সিলেক্ট হলাম, ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপছিল। এত বড় মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি, এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে!’
মায়ের গান শুনে শুনে অঙ্কিতা ভট্টাচার্যও সব ধরনের গান করেন। তবে তামিল গান শুনতে বেশি ভালো লাগে। সংগীতে তাঁর আইডল আশা ভোসলে। ভীষণ পছন্দ করেন শ্রেয়া ঘোষালের গান। এ ছাড়া কিশোর কুমার, সনু নিগম, সুনিধি চৌহানসহ আরও অনেকের গান শোনেন।
গানের পাশাপাশি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য আবৃত্তি করেন, নাটকে অভিনয় করতে, নাচ করেন। তিনি খেলাধুলাও করেন। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কয়েকবার পুরস্কারও জিতেছেন। তিনি সাজতে খুব ভালোবাসেন। বললেন, ‘নিত্যনতুন সাজ দারুণ লাগে। “সারেগামাপা”র গ্র্যান্ড ফিনালের জন্য সাজটা আমার খুব ভালো লেগেছে। সবাই বলেছেন, তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।’
নিজের রঙিন ভবিষ্যৎ নিয়ে অঙ্কিতা ভট্টাচার্য বললেন, ‘আমি কিন্তু গ্রামের মেয়ে, এটা কখনো ভুলব না।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
এবার অভিনয়ে পরিচালক শিমুল সরকার
নজরুল ইসলাম তোফা:: পরিচালক শিমুল সরকার। সময়ের তরুণ জনপ্রিয় একজনবিস্তারিত পড়ুন
সালমানকে উৎসর্গ করে গাইলেন টুটুল
জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম টুটুল শ্রোতা মহলে আরজে টুটুলবিস্তারিত পড়ুন
সন্তানকে নিয়ে নিউইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা
সন্তানকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা। বিচ্ছেদ হলেও তাহসান-মিথিলাবিস্তারিত পড়ুন