রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টার মধ্যেই নতুন করে অনুপ্রবেশ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে যখন নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ চলছে, তখন নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে করা ‘ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট’ চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে ১৫০০ করে রোহিঙ্গার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন সপ্তাহে অন্তত এই পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন কিছু নয়। হবে গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর থেকে যে হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ছুটে এসেছে, সেটা এর আগে কখনও ঘটেনি। আর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও কখনও এতটা সক্রিয় হয়নি।
বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ধরার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে গেছে। গত ২৪ নভেম্বর সই হয় সমঝোতা স্মারক ও ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি। গত ১৬ জানুয়ারি সই হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে ১৫০০ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস শুরুর কথা সে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ না জানানো হলেও, শিগগির শব্দটি উচ্চারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু সেই ২৩ জানুয়ারির পরও পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কাম্পে। আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে।
এর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গারা আবার রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে দলে দলে। আগে যারা এসেছিল, তাদের মতোই নতুনদেরকেও উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার দাবি, রাখাইনে নতুন করে নির্যাতন ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা।
নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনের রোহিঙ্গা পল্লীতে এখনও নানা নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত ট্রানজিট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথা হয় তিন দিন আগে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী সানজিদার সঙ্গে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চাকমাপাড়া গ্রামের জামাল হোসেনের স্ত্রী তিনি।
সানজিদা বলেন, ‘নিজ গ্রাম রাখাইনে চাকমাপাড়া থেকে অনেকেই বাংলাদেশে চলে আসলেও এতদিন আমরা আসিনি। কারণ কষ্ট হলেও থাকতে পারলে অন্তত নিজ বাড়িতে থাকার সুখ আলাদা। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার আর কোনও খোঁজ পাইনি। পরে উগ্রপন্থী মগের ছেলেরা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ছোট ছেলেকে জ্বলন্ত আগুনে ছুড়ে মারে। এতে কোনওমতে আগুনে পুড়ে যাওয়া সন্তানসহ অন্যদের নিয়ে মংডু ডংখালী সীমন্ত দিয়ে পালিয়ে আসি।’
রাখাইনের রাচিদং থানার সাংগুদাইন গ্রাম থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘রাখাইনে আবারও ধরপাকড় শুরু হয়েছে। নতুন করে নির্যাতন শুরু হওয়ায় গত তিন দিন আগে এক সঙ্গে ১০৭ জন রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।’
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিস কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘এখনও প্রতিদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। আগের মতো ব্যাপক হারে না আসলেও প্রতিদিন ২-৩ শত রোহিঙ্গা আসছে। অথচ চুক্তিতে বলা ছিল যে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখতে পাইনি।’
এ বিষয়ে গত সোমবার কক্সবাজার সফরে এসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি রোহিঙ্গারা নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে চলে আসছে, এতে আমাদের করার কিছুই নেই। গত ৪০ দিনে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গত কয়েক দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ করে রোহিঙ্গা এসেছে। আমরা যতটুকু জেনেছি, মিয়ানমারের কিছু লোক তাদের বলছে অন্যরা যেহেতু বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, তোমরাও চলে যাও। সে কারণে তারাও বাংলাদেশে আসছে। আবার অনেকেই আসছে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের খুঁজতে।’
‘এতে আমরা বিচলিত নই। প্রত্যাবাসন যখন শুরু হবে তখনও যদি রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত থাকে তখন আমাদের সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয় গত ২৪ নভেম্বর। চুক্তির দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই দেশের প্রস্তুতি না থাকায় প্রত্যাবাসন পিছিয়ে যায়। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যথাযথ প্রস্তুতি এবং নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করলেও সেটি হচ্ছে না।
চুক্তির পর গত আড়াই মাসে আইওএম ও সরকারের দেওয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন পুরাতন মিলে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৬ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) তথ্য মতে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন