দাঁতের সেনসিটিভিটি নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা
কমবেশি দাঁতের সমস্যায় ভুগেন না, এখন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। বরং, বলা যায় এই সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষই খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। অবাক করা বিষয় হলো, শুধুমাত্র সেনসিটিভিটির প্রাথমিক লক্ষণ বা কারণ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকার কারণেই বেশিরভাগ মানুষ এই দাঁতের সেনসিটিভিটি সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ দাঁত-সংক্রান্ত এক বা একাধিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই এই সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতে পারেন। আশার বিষয় হলো, নিত্যদিনের দাঁতের যত্নে কিছু অভ্যাস বদলানোর মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে খুব সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পেরে।
দাঁতের সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিগত কয়েক বছরে মানুষ এ সম্পর্কে বেশকিছু ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। অনেক সময় আমরা সমস্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা না করে এই ভুল ধারণাগুলোকেই বিশ্বাস করে থাকি। তাই দাঁতের সেনসিটিভিটি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবার আগে এই ভুলগুলো ভাঙ্গাতে হবে এবং সত্যটা জানতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ভুল ধারণাগুলো এবং তার সত্যতা-
১। ক্যাভিটির কারণে দাঁতের সেনসিটিভিটি হয়:
হ্যাঁ, ক্যাভিটি দাঁতের সেনসিটিভিটি হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, তবে শুধুমাত্র ক্যাভিটির কারণেই এই সমস্যা হয়- এই ধারণাটা ভুল। মূলত সেনসিটিভিটি দেখা দেয় দাঁতের ক্ষয় থেকে, তবে ক্ষয় ছাড়াও এ সমস্যা হতে পারে।
২। শুধুমাত্র ঠান্ডা-মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলেই সেনসিটিভিটি হয়:
ডেন্টিনের সংস্পর্শে গরম বা ঠান্ডা, মিষ্টি বা টক জাতীয় কিছু লাগলেই তা দাঁতের অভ্যন্তরের নার্ভকে সরাসরি আঘাত করার মাধ্যমে সেনসিটিভিটি তৈরি করে এর ফলে দাঁত শিরশির করবে। শুধুমাত্র ঠান্ডা-মিষ্টিজাতীয় কিছু খেলেই সেনসিটিভিটি হয়-এই ধারণাটা ভুল।
৩। দাঁতের সেনসিটিভিটি সাময়িক, একসময় আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে:
এটি ভুল ধারনা। সেনসিটিভিটির সমস্যা দেখা দিয়ে আবার তা সেরে যায়। তবে যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন এর সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তা বারবার ফিরে আসবে এবং আপনাকে কষ্ট দিতে থাকবে।
৪। খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া ভালো:
ব্রাশ করা শুধুমাত্র দাঁতের জন্য নয়, বরং দাঁতের মাড়ি এবং জিহ্বার জন্যও ভালো। তবে, কোন কিছু খাওয়া বা পান করার পরপরই ব্রাশ করা উচিত না; কেননা এই সময় দাঁতের উপরিভাগ তুলনামূলক কোমল থাকে। ফলে খাওয়ার সাথে সাথে ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল এর আবক্ষয় দেখা দেয় এবং সেনসিটিভিটি দেখা দেয়। তাই বিশেষজ্ঞরা খাওয়ার কমপক্ষে আধাঘন্টা পর দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দেন। শুধু দাঁত নয়, দাঁতের মাড়ি এবং জিহ্বা নিয়মিত ব্রাশ করা উচিত।
৫। দাঁতের সেনসিটিভিটি থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় নেই:
সেনসিটিভ দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাজারে সেনসিটিবিটি উপশম করে এমন টুথপেস্ট ব্যাবহার করা উচিত। ডেন্টিস্টরাও এর প্রতিকার হিসেবে সেনসিটিভিটির জন্য তৈরি বিশেষ টুথপেস্টের কথা বলে থাকেন। ডেন্টিস্টের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে সেনসিটিভির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ওরাল হেলথ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন এমন কিছু তথ্য পাওয়া যায়, যা আপনাকে চমকে দিবে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন দিনে দু’বার নিয়মিত ব্রাশই করেন না; দশজনের মধ্যে একজন ব্রাশ করার কথা নিয়ম করেই ভুলে যান; প্রাপ্তবয়স্কদের ৪২% টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ ব্যবহার করে থাকেন এবং প্রতি তিনজনের একজন কখনোই তাদের দাঁত ফ্লস করাননি। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ডেন্টিস্টরা দাঁতের যত্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রাখেন-
১। কমপক্ষে দুই মিনিট সময় নিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন
২। নিয়মিত দাঁত ফ্লস করান
৩। মাউথ ওয়াস ব্যবহার করুন
৪। চিনিমুক্ত গাম খাওয়া যেতে পারে।
৫। জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন
৬। খাবার ভালোভাবে পরিষ্কার করুন
৭। মচমচে সবজি খান। যেমন- শসা, গাজর ইত্যাদি।
৮। অ্যাসিডিক খাবার ও পানীয় পরিহার করুন
৯। দাঁত ব্রাশ করার জন্য সেনসিটিভিটি রোধ করে—এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
এমনটাই মত দিয়েছেন প্রায় ৯ শতাংশ ডেন্টিস্ট। তাঁরা মনে করেন, এমন টুথপেস্ট দাঁত শিরশিরের যন্ত্রণা থেকে আপনাকে অনেকটাই রেহাই দেবে। আপনি যদি দাঁত নিয়ে কোন অস্বস্তিতে পড়েন বা যদি মনে হয় যে তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে সরাসরি ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়াটাই সমীচীন হবে। এছাড়াও সাধারণ টুথপেস্টের পরিবর্তে সেনসিটিভ দাঁতের জন্য বিশেষ টুথপেস্ট এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। দিনশেষে, মুখের সঠিক যত্নই আপনার দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির সুস্থতা নির্ধারণ করে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে!
এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরেরবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক
কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিতবিস্তারিত পড়ুন
ভালোবাসার সুড়ঙ্গ রহস্য (ভিডিও)
প্রকৃতি অপার রহস্যের ভান্ডার। তাই সে মাঝে মাঝেই আমাদের চমকেবিস্তারিত পড়ুন