তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্ত হচ্ছে
হাওড়-বাঁওড়, পাহাড়ীসহ দুর্গম এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দীর্ঘ ৮ বছর পর এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) হতে যাচ্ছে সরকার স্বীকৃত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নতুন করে এমপিও পেতে পারে প্রায় তিন হাজার বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর নতুন ও পুরাতন এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হিসেবে সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।
এমপিওর জন্য গঠিত ‘প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করলেও তাদের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি নেই। এমপিওর জন্য প্রযোজ্য চার শর্ত শতভাগ পূরণ করতে পেরেছে দুই হাজারেও কম প্রতিষ্ঠান। তবে দীর্ঘদিন এমপিও বন্ধ থাকার কথা বিবেচনায় নিয়ে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে চায় সরকার।
কমিটির একাধিক সদস্য বৃহস্পতিবার বলেছেন, এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য এমপিওর তালিকায় এসেছে দুই হাজার ৭৬২ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হাওড়-বাঁওড়, পাহাড়ীসহ দুর্গম এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা তালিকা চূড়ান্ত করতে চান। হাওড়-বাঁওড় পাহাড়ীসহ দুর্গম এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা করলে মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান হতে পারে প্রায় তিন হাজার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য বলেছেন, তারা বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাইয়ের সর্বশেষ অবস্থা শিক্ষামন্ত্রীকে অবগত করেছেন। একই সঙ্গে তালিকায় দুর্গম ও নারী প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে দুর্গম ও নারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে চায় কমিটি। এসব অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে নতুন এমপিও নীতিমালা কিছুটা শিথিল করাও হতে পারে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে এক হাজার ৬২৯টি স্কুল ও কলেজ, ৫৮২ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৫৫১ মাদ্রাসা। যাদের এমপিওভুক্ত হওয়ার সব যোগ্যতা রয়েছে বলে বলছে কমিটি। বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। নতুন আরও তিন হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে সেই প্রতিষ্ঠান ও আগের ২৭ হাজার ৮১০ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হিসেবে নতুন অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।
এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬২০ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ হাজার ৬৯১ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ হাজার ৯৩৩ কোটি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ হাজার ১২ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
এমপিওভুক্তির ‘বাছাই কমিটি’র সদস্য ও ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ নম্বরের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। দুর্গম এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠান শতভাগ যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, সেগুলোকে কীভাবে বিবেচনায় নেয়া যায় তা ভাবা হচ্ছে। নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অগ্রাধিকার পাবে। এটা করা হলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কিছু বাড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালের পর গত ৮ বছরে এমপিওভুক্ত হয়নি কোন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ এই সময়ে ৭ হাজারেরও বেশি বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১০ সালের আগে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানও আছে প্রায় তিন হাজার। সব মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান আছে এমপিওর অপেক্ষায়। এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষক কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছেন এমপিওর জন্য। ২০১১ সাল থেকেই চলছে এমপিওর দাবির আন্দোলন। বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যরাও নিজ এলাকার প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য একই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার এমপিও নিয়ে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সমস্যা হচ্ছে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওর অপেক্ষায় থাকলেও এমপিওর যোগ্যতা পূরণ করতে পারছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই। ফলে অর্থ সঙ্কটের বাইরেও প্রতিষ্ঠানের অযোগ্যতাও এমপিওর পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরের ৫ থেকে ২০ আগস্ট বেসরকারী স্কুল ও কলেজের কাছ থেকে অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হয়েছিল। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করে। নতুন এমপিওর জন্য চারটি শর্ত দিয়ে আবেদন করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই চারটি শর্ত হলো-প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির বয়স, শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হার। যেসব প্রতিষ্ঠান এই শর্তগুলো পূরণ করেছে তাদের মধ্য থেকে স্বয়ংক্রিয় গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার জন্য বাছাই করা হয়।
বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রতি মাসে এদের বেতনভাতা বাবদ সরকারের খরচ হয় ৯৪২ কোটি টাকা। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারী করার প্রক্রিয়ায় আছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি। প্রতিষ্ঠান এমপিওর দাবিতে বহুদিন যাবত আন্দোলন করছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন ‘ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন’। ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে আছেন অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়। সম্প্রতি এ ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন সংগঠনের নেতারা।
অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী ১০-১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করায় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন চললেও সরকার তাদের দাবি বাস্তবায়ন করছে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি আমাদের দাবি পূরণ করবেন বলে আশা করছি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন