তিন বছর ধরে পাহাড় কেটে রাস্তা বানালেন বৃদ্ধ
গত তিন বছর ধরে একটু একটু করে পাহাড় কেটে রাস্তা বানাচ্ছেন ভারতের কেরালা রাজ্যের ৫৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। এই বৃদ্ধের কথা শুনে বিহারের দশরথ মাঝির কথা মনে পড়তে পারে। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই যার স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন।
একটা পাহাড়ের কারণে অনেক কিলোমিটার ঘুরে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছেছিলেন তিনি। পাহাড় ঘুরে যেতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে স্ত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে জেদের বশে নিজেই সেই পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন দশরথ।
তবে দশরথ শারীরিকভাবে সক্ষম থাকলেও শশী জি নামের ওই বৃদ্ধ কিন্তু শারীরিক ভাবে সক্ষম নন। তার একটা হাত ও একটা পা একেবারেই অচল। বড়সড় ওই পাহাড় কাটতে মূলত বা হাতটাই ছিল তার একমাত্র ভরসা। কারণ অন্য হাতটা তো কর্মক্ষম নয়। কাজ করা তো দূরের কথা, ওই হাতটি ভাল করে নাড়তেও পারেন না তিনি। ডান পা দিয়েও হাঁটতে পারেন না ঠিক করে। পক্ষঘাতগ্রস্ত সেই শরীর নিয়ে দিনের পর দিন তিনি পাহাড় কেটেছেন।
এক সময় নারকেল গাছ বেয়ে তর তর করে উঠে যেতে পারতেন। যত লম্বাই হোক না কেন তার জন্য সেটা কোনো সমস্যাই ছিল না। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে ঘুরে এই কাজই করতেন তিনি। কিন্তু ১৮ বছর আগে কাজ করতে গিয়ে লম্বা একটি নারিকেল গাছ থেকে পড়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির পর একটি হাত আর একটা পা অকেজো হয়ে যায়। আধাপঙ্গু হয়ে যান তিনি। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সংসার।
এমন সময় শশীর মাথায় একটা চিন্তা আসে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে একটা তিন চাকার গাড়ি চাইলে কেমন হয়? সেই গাড়ি চালিয়েই তো তিনি ছোটখাটো একটা ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তাতে তো বেঁচে যেতে পারে সংসারটা। এর পরেই তিনি পঞ্চায়েত প্রধানকে চিঠি দিলেন। কিন্তু এ নিয়ে পঞ্চায়েতের কোনো মাথাব্যাথা দেখা গেল না।
পরে তিনি পঞ্চায়েতকে রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। রাস্তা বানানো হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় কিন্তু রাস্তা আর হয় না। পাহাড় কেটে রাস্তা হওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা গেল না। বেশ কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর শশী নিজেই সে কাজে হাত দিলেন। গত তিন বছর ধরে প্রতি দিন শাবল, কোদাল নিয়ে এক হাতের ভরসায় কেটে চলেছেন পাহাড়। রোজ নিয়ম করে ৬ ঘণ্টা রোদ, ঝড়, বৃষ্টি সব উপেক্ষা করে লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন তিনি।
প্রথম দিকে লোকজন হেসেছে। তবুও দমেননি তিনি। তিনি জানান, ‘আমি শুধু রাস্তা কেটে গিয়েছি। কারণ, সকলে ভেবেছিল আমি পারব না। নিজেকে নিজের কাছেই প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল। পঞ্চায়েত আমাকে গাড়ি দেয়নি। কিন্তু আমি গ্রামবাসীকে একটা রাস্তা তো দিতে পারলাম। সেটাই বা কম কিসের!’
শশীর স্ত্রী জানালেন, বহুবার বারণ করার পরও নিজের সংকল্প থেকে পিছু হটেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তার জেদ আর সাহসেরই জয় হয়েছে।
আর এক মাসের কাজ বাকি আছে। রাস্তার কাজ একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পর পঞ্চায়েত তাকে একটা গাড়ি দেবে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে শশীর।
খবর এনডিটিভির।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন