তালায় অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ হত্যায় আদালতের নির্দেশে থানায় এজাহার গ্রহন ॥ ১মাসেও গ্রেফতার নেই
সাতক্ষীরার তালার খলিশখালী এলাকার অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ শিল্পী সরকার (২০) কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা পরিতোষ সরকারের আদালতের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ স্বামী,শ্বশুর,শ্বাশুড়িসহ ৪ জনকে আসামী করে অভিযোগটি এজাহারভূক্ত করেছে। তবে মামলাটি তুলে নিতে আসামীরা মোবাইলে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অন্যথায় তাকেও স্বপরিবারে মেয়ে শিল্পীর পথেই পাঠিয়ে দেয়া হবে। ঘটনায় রীতিমত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন অসহায় পিতা পরিতোষ ও তার পরিবার।
এর আগে তিনি সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইবুনালে একটি পিটিশন দাখিল করেছে। যার নং-১০/১৯। ধারা: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০(সংশোধনী-২০০৩) এর ১১ (ক)/৩০। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফ.আই.আর গ্রহনপূর্বক মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে নিহতের পিতা দাবি করেছেন,গত বছরের ১৩ মে’ তার মেয়ে শিল্পী রাণী সরকারের সাথে বিয়ে হয় একই জেলার পাটকেলঘাটা থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অতুল সরকারের ছেলে ভবতোষ কুমার সরকারের সাথে। বিয়ের সময় পণ হিসেবে ভবতোষকে নগদ ২ লক্ষ টাকা,২ লক্ষ টাকার স্বর্ণলংকার,১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সাংসারিক আসবাব ও তৈজষপত্র প্রদান করেন। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় আরো ১ লক্ষ টাকা গ্রহন করে। এরপরও যৌতুকলোভী ভবতোষ ক্ষ্যান্ত হয়নি। দোকান ঘরসহ ব্যবসা করতে শিল্পীকে আরো ২ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বিভিন্ন সময় চাপ এমনকি শিল্পী ফের পিত্রালয় থেকে টাকা আনতে রাজী না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করতো ভবতোষ। যার এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী সকাল ৭ টার দিকে শিল্পীর স্বামী ও তার শ্বশুর,শাশুড়ীসহ অন্যান্যরা তার উপর চরম নির্যাতন চালাতে থাকে এতে এক পর্যায়ে শিল্পীর মৃত্যু হলে তারা তাকে গলায় গামছা পেচিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুঁলিয়ে দিয়ে আতœহত্যা বলে প্রচার চালায়।
নিহতের পিতা আরো দাবি করেন যে,মেয়ের বাড়ি এলাকার আশুতোষ,সন্তোষ ও গৌতমসহ অন্যান্যরা তাকে ফোন করে তার কন্যাকে হত্যার খবরটি দেয়। এরপর তিনি অন্যান্যদের সাথে নিয়ে শিল্পীর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বারান্দায় তার মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর লাশের কাছে গিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও গলায় একাধিক ক্ষত চিহ্ন দেখতে পান। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করলেও কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে মেয়েকে হারিয়ে পরিতোষ যখন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখন ময়না তদন্ত’র পর এক প্রকার তড়ি-ঘড়ি করে তার স্বামীর বাড়ির লোকেরা লাশের সৎকার সম্পন্ন করে। এর আগে ঘটনায় পাটকেলঘাটা থানায় একটি ইউডি মামলা হয়।
এরপর মানসিকভাবে বিপর্যস্থ অসহায় পিতা পরিতোষ খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে গত ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ঐ অভিযোগ করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পাটকেলঘাটা থানাকে এফ,আই,আর গ্রহনপূর্বক তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। যার আদেশ নং-০১। তারিখ ১৫/১/১৯।
এলাকাবাসী জানায়,শিল্পীকে নির্যাতন শেষে হত্যার আগের দিন পর্যন্ত সে প্রতি দিন সকালে তার স্বামী কর্মস্থলে যাওয়ার সময় সেও তার পিছু পিছু বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। তবে প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিনও স্বামী ভবতোষ কর্মস্থলে যায় তবে সেদিন পিছু পিছু তার স্ত্রী শিল্পী না গিয়ে তার পিতা-মাতা দাঁড়িয়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে,এর আগেই শিল্পীর ভব লীলা সাঙ্গ করা হয়। তাই সেদিন শিল্পী স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বিদায় জানাতে আসেনি। বিষয়টি থেকে আঁচ করা যেতে পারে যে,শিল্পী হত্যা যজ্ঞে তাদের সম্মিলিত সম্পৃক্ততা ছিল। যদিও কিছুক্ষণ পর শিল্পীর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বামী ভবতোষ বাড়ীতে ফিরে আসে। ধারণা করা হচ্ছে,ঘটনার দিন ভবতোষের স্ত্রীর পরিবর্তে মা-বাবার বিদায় জানাতে রাস্তায় আসা এবং মৃত্যুর খবরে কিছুক্ষণ পর তার বাড়িতে ফিরে আসা সব কিছুই ছিল পরিকল্পিত নাটকের মঞ্চায়ন মাত্র। ভবতোষ পরিবারের দাবিনুযায়ী সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে অর্থাৎ প্রকৃতার্থে শিল্পী আতœহত্যা করে থাকলে ঘটনার দিন বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় শিল্পী ঠিক কোথায় ছিল? আর তার খোঁজ-খবর না নিয়েই ভবতোষ কেন বাড়ির বাইরে যাচ্ছিল? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে নিহতের পিতা-মাতা ও এলাকাবাসীর মনে। দাবি করা হচ্ছে,সুষ্ঠু তদন্তেই বেরিয়ে আসবে শিল্পী হত্যার অন্তরালের অজানা অনেক তথ্য।
সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে পাটকেলঘাটা থানা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রেকর্ড পূর্বক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত আসামীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারনি। তবে মামলার পর থেকে ভবতোষ গং বিভিন্নস্থানে ব্যাপক তদদ্বির ও মোটা অংকের টাকাসহ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। সাংবাদিকদের ম্যানেজসহ বাদীকে হুমকি দিচ্ছে মামলা উঠিয়ে আনার জন্য। নিহত শিল্পীর পিতা পরিতোষ সরকারের দাবি,মামলা তুলে না নিলে ভবতোষের পিতা অতুল তাকে শিল্পীর পরিণতি হবে বলে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে হুমকি অব্যাহত রেখেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন