কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাড়ে চার লাখ মানুষের জন্য ৩ জন চিকিৎসক
মানুষের মৌলিক চাহিদার যে কয়টি স্তর রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল চিকিৎসা সেবা। এই চিকিৎসা সেবার মানকে এগিয়ে নিতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকার নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করলেও কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে ব্যতিক্রম চিকিৎসা সেবা। এই উপজেলায় বসবাসরত সাড়ে ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে মাত্র তিন জন চিকিৎসক। কথাগুলো গল্পের মতো শুনালেও দীর্ঘদিন যাবৎ এই বাস্তবকে মেনে নিয়ে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হলেও দেখার কেউ নেই?
নোংরা, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁত সেঁতে পরিবেশ, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে এ উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে দারুণ ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান মারাত্বক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। কাগজ আর কলমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বহাল থাকলেও মামা খালুর জোরে বিভিন্ন অজুহাত ও সমস্যা দেখিয়ে ডেপুটিশনে রয়েছেন অনেকেই। কিছু ডাক্তার ও কর্মচারিরা রয়েছেন যাদেরকে মাসে শুধুমাত্র একবার বেতন নেওয়ার সময় ছাড়া হাসপাতলে দেখা যায়না। এমনি ভাবে বেহাল দশার মধ্যে দিয়ে দিনের পর দিন অতিবাহিত হচ্ছে উপজেলার সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী অরবিন্দু কুমার ঘোষ ও ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ঝর্ণা রানী এ প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০৬ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৪০ জন। বাকি ৬৬টি পদ দীর্ঘ দিন যাবৎ শূন্য থাকার কারণে হাসপাতলের স্বাস্থ্য সেবা দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নামমাত্র ৫০ শর্য্যার হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে কাজ করছেন ৩জন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডাঃ আকছেদুর রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ তৈয়েবুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ জিয়াউর রহমান। আগামি মাসের দিকে অবসর জনিত কারণে ডাঃ আকছেদুর রহমান হাসপাতাল থেকে বিদায় নেবেন বলে জানাযায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জরী, গাইনি, এ্যানাস্থাসিয়া, দন্ত, রেডিও লোজিষ্ট, মেডিকেল কনসালটেন্ডসহ কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দীর্ঘ দিন ধরে না থাকায় প্রায় সকল ধরণের চিকিৎসা সেবা বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালে ৩জন সুইপার কর্মরত থাকলেও তারা রোগগ্রস্থ কিছুই করতে পারেনা যার ফলে হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বহিরাগত ভাড়াটিয়া শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কতৃপক্ষ। ৫০ শর্য্যার হাসপাতলে প্রতিদিন ৫০/৬০ জন রোগির রান্নার ২জন বাবুর্চির পদ থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র ১জন। ফলে রোগিদের খাদ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে নানা ধরণের জটিলতাসহ নিম্মমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক রোগির অভিযোগ রয়েছে। নার্সিং সুপারভাইজারের পদটি দীর্ঘ দিন যাবৎ রয়েছে শূন্য। সুদীর্ঘকাল জুনিয়ার মেকানিকের পদটি শূন্য থাকায় বহিরাগত ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। পাহারা দেওয়ার জন্য ২জন নাইটগার্ড থাকার কথা থাকলেও লোক না থাকার কারণে রাতের আঁধারে হাসপাতাল থাকে অরক্ষিত। যার ফলে বহিরাগত বখাটে ও নেশাগ্রস্থদের আবাসস্থলে পরিনত হয়েছে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ন চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি। হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর রাখায় ফুলের বাগানের জন্য একটি মালির পদ থাকলেও সেটি বর্তমানে শুন্য রয়েছে। ৩জন স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদে বহু দিন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১০টি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৭জন, বাকি ৩টি পদ দীর্ঘ দিন যাবৎ খালি আছে। স্বাস্থ্য সহকারী ৫০টি পদের মধ্যে ৪১জন কাজ করছে, বাকি ৯ টি পদ শূন্য রয়েছে। এ
ছাড়া হাসপাতালে আগত রোগিদের সেবার মান বাড়াতে ২টি এক্সরে মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ মেরামতের অভাবে বে-সরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে বেশী টাকা খরচ করে প্রয়োজনের তাগিদে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন রোগগ্রস্থরা। হাসপাতালে রোগিদের বহনের ক্ষেত্রে ২টি এ্যাম্বুলেন্সে গাড়ি থাকলেও ১টি দীর্ঘ দিন যাবৎ অকেজো থাকায় অপরটি জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন ড্রাইভার আদম আলী। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ওয়ার্ড বয়, আয়া, নাইট গার্ড ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান একদম নেই বললেই চলে। এদিকে ডাক্তার আকছেদুর রহমান অবসর যাচ্ছেন শুনে হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার বিষয়টি নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষসহ জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে উপজেলাবাসী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গ্রেফতার ১৩, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-গাঁজা উদ্ধার
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক মামলারবিস্তারিত পড়ুন