আঠারোর আগেই পুরুষদের মৃত্যু!
সময় ফুরালেই চলে যেতে পরপপারে। কিন্তু একটি পরিবারে ১৮ বছরের আগেই পুরুষ সন্তানদের পাড়ি দিতে হয় পরপারে। পরিবারটি হচ্ছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভেন্নতলা গোপীনাথপুর গ্রামে। নির্দিষ্ট বয়সের গন্ডি পেরোবার আগেই ওই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের একের পর এক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে এবং চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ণয়ে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এলাকাবাসী জানান, গোপীনাথপুর গ্রামের মজিবর রহমান স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও তার দুই সন্তান বাবু ও আব্দুস সাত্তার ১৫ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। মজিবরের একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমের তিন ছেলে সন্তানের অবস্থাও একই রকম। এর মধ্যে তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ১৮ বছর পূর্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। এখন বাকি দুই সন্তান আনারুল ইসলাম (১০) ও সাবিকুল ইসলাম (৮) প্রতিবন্ধী হয়ে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
মৃত মজিবর রহমানের স্ত্রী সিতা বেগম জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় ছেলে বাবু ১৮ বছর বয়সে মারা যায়। এরপর ছোট ছেলটি মারা যায় ১৬ বছর বয়সে। সিতা বেগম আরো জানান, একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমকে স্থানীয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রাখা হয়েছে। রফিক রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মেয়ের তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে ১৮ বছরের আগেই মারা গেছে। বাকি দুই নাতি এখন পঙ্গু হয়ে বিছানায়। ছেলে ও নাতিদের এর আগে ভারতের কৃষ্ণনগর, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঝিনাইদহ ও যশোরের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন- কিন্তু ফল হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জন্ম ব্যাধি।
মঞ্জু বেগম জানান, তাদের বংশে মেয়ে সন্তানরা এই রোগে আক্রান্ত হয় না। তিনি ও তার দুই মেয়ে রাবিনা খাতুন (১৪) ও সাবিনা খাতুন (৯) সুস্থ আছেন। রাবিনা ক্লাস নাইনে ও সাবিনা ক্লাস থ্রিতে পড়ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দীন বলেন, আমি পরিবারটিকে চিনি। এই পরিবারে কোনো ছেলে সন্তান বাচে না। অজ্ঞাত রোগটির চিকিৎসায় পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন ভিটেবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই।
একই গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন জানান, মজিবর রহমানের দুই ছেলে ও তার মেয়ের তিন ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজে দুইবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগটির উপযুক্ত কোনো চিকিৎসা মেলেনি। তিনি পরিবারটির উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ শহরের ক্রিসেন্ট প্যাথলজির প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার ও কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা জানান, ৬ মাস আগে তিনি চিকিৎসা করেছিলেন মঞ্জুর দুই ছেলের। কিন্তু এখন রোগটি সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে প্রকৃত রোগ নির্ণয়ে আমি তাদের ঢাকার পিজি হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলাম।
সিতা বেগম আরো জানান, ছেলেদের বয়স যখন ৬ বছর, তখন থেকেই তাদের দুই পা অবশ হতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে দুই হাত অকেজো হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়ে। আর ১৮ বছরের আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায় পরপারে। পরিবারের একের পর এক সদস্যের এমন জটিল আর ‘অজ্ঞাত রোগের’ চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি এখন নিঃস্ব প্রায়। কাড়ি কাড়ি টাকা চলে যায়, কিন্তু রোগ নির্ণয় হয় না- একই কারণে মেলেনা উপযুক্ত চিকিৎসা।
তিনি জানান, ঝিনাইদহের একজন ডাক্তার তার নাতিদের রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। টাকার অভাবে যেতে পারেনি।
এদিকে, ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন আব্দুল হালিম জানান, এ বিষয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা দু-একদিনের মধ্যেই গোপীনাথপুর গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে। পরিবারটির পাশে কেউ দাড়াতে আগ্রহী হলে যোগাযোগের করতে পারেন। মোবাইল : রফিকুল ইসলাম (প্রতিবন্ধী ছেলে দুটির বাবা) ০১৯৩৬২৯৭৪১৬।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন